HSC

খাদ্যদ্রব্যের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে পরিপাক নালির ভূমিকা

জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র - খাদ্যদ্রব্যের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে পরিপাক নালির ভূমিকা

খাদ্যদ্রব্যের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে পরিপাকনালির এসিড ও এনজাইমের ভূমিকা (প্রথম প্রতিরক্ষা স্বর) (Role of Digestive Acid and Enzyme in the Destruction of Bacteria in Food)

আমরা প্রতিনিয়ত অসংখ্য ধরনের ব্যাকটেরিয়া (ও ভাইরাস)-এর মুখোমুখি হচ্ছি। সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হচ্ছে, খাদ্যের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া গ্রহণ। বাঁচার জন্যে আহার করি, কিন্তু তা যদি ব্যাকটেরিয়া যুক্ত হয় তাহলে জীবন ধারণই অসাধ্য হয়ে পড়ে। কিছু ব্যাকটেরিয়া সব সময়ই খাদ্যবাহিত হয়ে দেহে প্রবেশ করে। কিন্তু দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকে বলে আমরা তা টেরও পাই না। নাসিকা-গহ্বর, গলবিল ও ট্রাকিয়ার মিউকাস ঝিল্লি যে মিউকাস ক্ষরণ করে তাতে লাইসোজাইম (lysozyme) মনোসাইটগুলো টিস্যু নামে এক ধরনের প্রোটিন থাকে যা ব্যাকটেরিয়ানাশক হিসেবে কাজ করে। ট্রাকিয়ার মিউকোসা শুধু মিউকাসই ক্ষরণ  করে না, এর প্রাচীর সিলিয়াময়ও বটে। সিলিয়া থাকায় ধূলা-বালি বা বহিরাগত বস্তু প্রবেশে বাধা পায়, সিলিয়ায় আটকা পড়ে এবং সিলিয়ার বহির্মুখি আন্দোলনে ব্যাকটেরিয়া মিউকাস মিশ্রিত হয়ে গলবিলে এসে পড়ে। গলবিল হয়ে এসব ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলিতে পৌঁছালে গ্যাস্ট্রিক জুসের HCI-এর ক্রিয়ায় ধ্বংস হয়ে যায়।

খাদ্যদ্রব্যের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে পরিপাকনালির এসিড ও বিভিন্ন এনজাইম নিম্নবর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।


১. লালাগ্রন্থিতে লাইসোজাইম, নামে এক ধরনের এনজাইম থাকে। এটি মুখ ও গলায় সংক্রমণকারী Staphylococcus, Streptococcus, Bacillus প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়াসহ অনেক ধরনের জীবাণু ধ্বংস করে। ব্যাকটেরিয়ার পলিস্যাকারাইড-নির্মিত কোষপ্রাচীর বিগলিত করে এদের বিনষ্ট করে।

২. লাইসোজাইম, লালা এবং লালায় অবস্থিত সামান্য পরিমাণ হাইড্রোজেন কার্বনেট আয়ন (এটি দাঁতে এসিডের উপস্থিতিকে প্রশমিত বা নিষ্ক্রিয় করে) মিলে দাঁত ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। লালারসের অবিরাম ক্ষরণে মুখের ভেতরে বা দাঁতে খাদ্যকণা জমতে পারে না, ফলে ব্যাকটেরিয়াও জন্মাতে পারে না।

৩. পাকস্থলি প্রাচীরের প্যারাইটাল বা অক্সিনেটিক কোষ-ক্ষরিত গ্যাস্ট্রিক জুসে বিপুল পরিমাণ HCl পাকস্থলির অভ্যন্তরে শক্তিশালী এসিডিক মাধ্যম (pH 1.0-2.0) সৃষ্টি করে। এসিডিক মাধ্যম খাদ্যে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে ধ্বংস করে।

৪. অন্ধ্রে বসবাসকারী কয়েক ধরনের মিথোজীবী অণুজীব থেকে ক্ষরিত অ্যান্টিবায়োটিক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং খাদ্যবাহিত কয়েক ধরনের ভাইরাসের বৃদ্ধি রহিত করে।

৫. যকৃত থেকে ক্ষরিত পিত্ত ক্ষারীয় রস( ph 8.0) অন্ত্রের ডিওডেনামে অবস্থিত কাইম (chyme)-এ অ্যান্টিবডি উৎপন্নের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি প্রতিহত করে।

৬. সমগ্র পৌষ্টিকনালির অন্তঃপ্রাচীর মিউকাসে আবৃত থাকে। মিউকাসে অবস্থিত এক ধরনের রাসায়নিক রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়াকে ঘিরে ধরে এবং প্রাচীরগাত্রে আটকে থাকতে বাধা দেয়।

Content added By
Promotion